'' সত্যের সাথে শান্তির পথে ''

বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলায় লন্ডভন্ড নেপাল (ছবিসহ) এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণে ভূমিকম্পের কারণ।















ভুমিকম্পের ভিডিওচিত্র দেখতে নিচের ছবিটি ক্লিক করুনঃ


See video 

নেপালে শনিবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর রবিবার সর্বশেষ খবরে মৃতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা আরো তিনগুণ বাড়তে পারে বলে দেশটির সরকার আশঙ্কা করছে। খবর: বিবিসি ও রয়টার্সের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছে, আর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছে অনেকে। রাজধানী কাঠমান্ডু ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ হিসেবে আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।

এদিকে নেপালে ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর দেশটিতে জরুরি উদ্ধার তত্পরতার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে।

উদ্ধারকর্মীরা শনিবার রাতভর ধ্বংসস্তূপ থেকে আটকে পড়া ব্যক্তিদের বের করে আনতে অনেক ক্ষেত্রে খালি হাতেই চেষ্টা চালিয়ে যান।

হাসপাতালে জায়গা নেই

শত শত মৃতদেহ নিয়ে আসা হচ্ছে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে। একই সাথে বাড়ছে আহতদের সংখ্যাও। আজ অনেক আহতদের বের করে নিয়ে আসতে থাকায় চিকিত্সা সামগ্রীর সরবরাহ অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। অনেককেই খোলা আকাশের নিচে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা

ভূমিকম্পের পর নেপালকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ। এর মধ্যেই ওষুধ, উদ্ধারকর্মী ও চিকিত্সা সামগ্রী নিয়ে ভারতে কয়েকটি বিমান নেপাল পৌঁছেছে।
এর আগে দেশটির তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজ্জাল বলেন, এই বিপর্যয় মোকাবিলায় তার দেশের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।
রিখটার স্কেলে ৭ দশকি ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল ছিল কাঠমন্ডু ও পোখরার মাঝের লামজুং। ৮০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ধারাহারা টাওয়ার ধসে নিহত হয়েছেন ১৮০ জন। দেশটির হাসপাতাল থেকে শুরু করে বাড়িতে কেবল মানুষের আর্ত চিত্কার শোনা যাচ্ছে। বহু লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ভূমিকম্পের আঁঁচ পড়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতেও। বাংলাদেশে তিনজন এবং ভারতে ৪১ জন নিহত হয়েছেন। মাউন্ট এভারেস্টে নিহতের সংখ্যা ১০ জন। খবর বিবিসি, রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি’র।

উত্পত্তিস্থল লামজুং

গতকাল নেপালের স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১২টায় ভূমিকম্প আঘাত হানে। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, কাঠমুন্ডু থেকে ৮১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং পোখরা থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বের লামজুং এলাকা ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল। সমুদ্র পৃষ্ঠের ২ কিলোমিটার গভীরে রিখটার স্কেলে প্রথম দিকে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। পরে এটা ৭ দশমিক ৯ এ গিয়ে পৌঁছায়। লামজুং পোখরা উপত্যকার মধ্যে পড়ে। সেখানে ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাতে হিয়ে নেপাল পুলিশের অন্যতম মুখপাত্র কমল সিং বলে, কম ঘনবসতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পোখরায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র গোর্খা জেলাতেই ১০ থেকে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ওই এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যায়নি। তথ্য জোগাড়ের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপর্যয় মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ধ্বংসস্তূপ কাঠমন্ডু

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী কাঠমন্ডু। সেখানে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫৩৪ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রত্যক্ষদর্শী এবং গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভূ-কম্পনগুলো ৩০ সেকেন্ড থেকে দুই মিনিটের মধ্যে অনুভূত হয়। কাঠমন্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলিও বিভিন্ন শহর থেকে তাদের কাঠমন্ডুগামী সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করে দেয়। ঘনবসতিপূর্ণ শহরটিতে প্রচুর বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। বেশ কিছু রাস্তায় দেখা যায় গভীর ফাটল। নেপালে ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র অভয় কুমার জানিয়েছেন, বহু পুরানো বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। সব মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেছে। নেপালের তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজ্জাল বলেছেন, এই বিপর্যয় মোকাবেলায় তার দেশের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। বিধ্বস্ত ভবন থেকে উদ্ধার করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে কেবল অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ এবং মানুষের আর্ত চিত্কার শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই হাত-পাসহ বিভিন্ন অঙ্গহানি হয়েছে। ইন্টারনেটে পাওয়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। চলাচল গাড়ি ফাটলে আটকে পড়েছে। ১৯৩৪ সালে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল সাড়ে ৮ হাজার বেশি মানুষ।

আকর্ষণীয় টাওয়ারটি আর নেই

ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পাওয়া ১৮৩২ সালে নির্মিত ১০০ ফুট উঁচু কাঠমুন্ডুর ধারাহারা টাওয়ার ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানে ১৮০ জন নিহত হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য প্রায় ২শ’ পর্যটক ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েছেন। প্রায় দশ বছর আগে টাওয়ারটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। টাওয়ারের ৯ তলায় ছিল একটি ব্যালকনি। এখান থেকে গোটা শহরকে সুন্দরভাবে দেখা যেত। কিন্তু কম্পনের জোরে পুরো টাওয়ারটিই ভেঙ্গে পড়ে।

বিপদে পর্যটকরা

২৮ মিলিয়ন মানুষের এই দেশটিতে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার পর্যটক। বসন্তে বিভিন্ন দেশ থেকে নেপালে প্রতি বছর প্রায় তিন লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। হিমালয়ের এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গে অন্তত দশ জন নিহত হয়েছেন। হিমালয় অভিযানে যাওয়া পর্বতারোহীদের একটি বেস ক্যাম্পের একাংশ বরফের ধসে চাপা পড়েছে। ভূমিকম্পের কারনেই জমাট বাধা এই বরফে ধস শুরু হয়। এই সময় এভারেস্টে অন্তত ১ হাজার পর্বাতোরোহী এভারেস্টে উদ্দেশ্যে যান। পর্যটন কর্মকর্তা মোহন কৃষ্ণ সাপকোতা বলেন, কতজন নিহত হয়েছে সেই বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলা খুব কঠিন। এভারেস্টে একে অপরের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। ভারতের ১২৫ তীর্থযাত্রীর আটকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
তাদের প্রতি সমবেদনা রইল।
(ছবি সংগৃহীত প্রথমআলো ও অন্যান্য সংবাদপত্র ) 

আল্লাহ এর আগেও আদজাতি,সামুদজাতি,শোয়েব (আ) এর কওমকেও দুর্যোগ দ্বারা শাস্তি প্রদান করেছেন কারণ তারাও অকৃতজ্ঞ ও অহংকারী,মির্থুক জাতি ছিল।


★ভুমিকম্প সংঘটিত হওয়ার কারণঃ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি★ 

কয়েকদিন পরপরই মৃদু কম্পনে সারা দেশ কম্পিত হয়ে উঠছে, এগুলো বড় একটা কম্পন আসার আগে সতর্ককারী কম্পন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের সতর্ক করেন যাতে করে তারা অনুত্প্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। চলুন দেখি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধান এবং এ থেকে কিভাবে আমরা বাঁচতে পারি তার উপায় বের করি।

কেন এত ভূমিকম্প সংগঠিত হয়? এবং এথেকে পরিত্রাণের উপায়। 

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এবং শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের, তাঁর পরিবারের উপর, তাঁর সাহাবাদের উপর এবং তাদের উপর যারা তাদের অনুসরণ করেন।

মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, তাঁর ইচ্ছা এবং তিনি যা কিছু প্রেরণ করবেন সে সকল বিষয়ে তিনিই সবকিছু জানেন এবং তিনি সর্বাধিক জ্ঞানী এবং সর্বাধিক অবহিত তাঁর আইন কানুন ও আদেশ সম্পর্কে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাহদেরকে সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন প্রকারের নিদর্শন সৃষ্টি করেন এবং বান্দাহর উপর প্রেরণ করেন যাতে করে তারা মহান আল্লাহ কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও ভীত হয়। বান্দাহরা মহান আল্লাহর সাথে যা শিরক করে (অর্থাৎ, ইবাদত করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সাথে অংশিদারিত্ব করে) এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি এই নিদর্শন সমূহ প্রেরণ করেন যাতে করে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে, তাদের বোধদয় হয় এবং তাদের রবের দিকেই একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করে।

মহান আল্লাহ বলেন:
“(আসলে) আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই” ( সূরা ইসরা ১৭:৫৯)

“অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ দিগন্ত বলয়ে প্রদর্শন করবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দিবো), যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের উপর এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, এই (কুরআনই মূলত) সত্য; একথা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার মালিক সবকিছু সম্পর্কে অবহিত?” (সূরা হা-মীম আস সিজদা : ৫৩)

“বল: আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম, অথবা তিনি তোমাদের দল-উপদলে বিভক্ত করে একদলকে আরেক দলের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাতেও সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।” (সূরা আল আনআম : ৬৫)

আল-বুখারী তার সহীহ বর্ণনায় জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন“তোমদের উপর থেকে (আসমান থেকে) ” নাযিল হলো তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “আমি তোমার সম্মূখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”, অথবা যখন, “ অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম” নাযিল হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবললেন:“আমি তোমার সম্মূখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। (সহীহ আল বুখারী, ৫/১৯৩)

(আবূল-শায়খ আল-ইস্পাহানি এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেন, “বল: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর, তোমাদের উপর থেকে (আসমান থেকে) ” যার ব্যাখ্যা হলো, তীব্র শব্দ, পাথর অথবা ঝড়ো হাওয়া; “অথবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে আযাব পাঠাতে সক্ষম”, যার ব্যাখ্যা হলো, ভুমিকম্প এবং ভূমি ধ্বসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া।)

নিঃসন্দেহে বর্তমানে যেসকল ভূমিকম্পগুলো ঘটছে তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি যা দিয়ে তিনি তাঁর বান্দাহদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। এই ভূমিকম্প এবং অন্যান্য সকল দূর্যোগগুলো সংগঠিত হওয়ার ফলে অনেক ক্ষতি হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে; এই দূর্যোগগুলো আসার কারণ হচ্ছে, শিরকী কার্যকলাপ(ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে মহান আল্লাহর অংশীদার বানানো) এবং মানুষের পাপ (মহান আল্লাহ যে কাজগুলো করতে নিষেধ করেছেন সে কাজগুলো করার কারণে)।
এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ বলেন: 
“(হে মানুষ) যে বিপদ আপদই তোমাদের উপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই, এবং (তা সত্ত্বেও) আল্লাহ তাআলা তোমাদের অনেক (অপরাধ এমনিই) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আশ শূরা : ৩০)

“যে কল্যাণই তুমি লাভ কর (না কেন, মনে রেখো), তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, আর যেটুকু অকল্যাণ তোমার উপর আসে তা আসে তোমার নিজের থেকে”। (সূরা আন নিসা : ৭৯)

মহান আল্লাহ অতীত জাতীর উপর প্রেরিত আযাব সম্পর্কে বলেন: 
“অতপর এদের সবাইকে আমি (তাদের) নিজ নিজ গুণাহের কারণে পাকড়াও করেছি, এদের কারো উপর প্রচন্ড ঝড় পাঠিয়েছি (প্রচন্ড পাথরের বৃষ্টি) {যেভাবে লূত জাতির উপর প্রেরণ করা হয়েছিল}, কাউকে মহাগর্জন এসে আঘান হেনেছে {যেভাবে শুআইব (আ) এর জাতীর উপর আঘাত হেনেছিল}, কাউকে আমি যমীনের নীচে গেড়ে দিয়েছি {যেভাবে কারুন জাতীদের উপর এসেছিল}, আবার কাউকে আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি {নূহ জাতী ও ফেরাউন ও তার লোকদের কে যেভাবে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল}, (মূলত) আল্লাহ তাআলা এমন ছিলেন না যে তিনি এদের উপর যুলুম করেছেন, যুলুম তো বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর করেছে”। ( সূরা আল আনকাবূত : ৪০)

এখন মুসলামানদের এবং অন্যান্যদের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর নিকট তওবা করা উচিত, আল্লাহর কর্তৃক নির্দিষ্ট একমাত্র দ্বীন ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরা এবং আল্লাহ তাআলা যেসব শিরকী কার্যকলাপ ও পাপ কাজ করতে নিষেধ করেছেন (যেমন: নামায পড়িত্যাগ না করা, যাকাত আদায় করা থেকে বিরত না হওয়া, সুদ-ঘুষ না খাওয়া, মদ না পান করা, ব্যাভিচার না করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা না করা, গান ও বাদ্যযন্ত্র না শোনা, হারাম কাজ সমূহ ভঙ্গ না করা প্রভৃতি)তা থেকে বিরত থাকা। এটা হতে আসা করা যায়, তারা এই দুনিয়া ও পরবর্তীতে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং আল্লাহ তাদের আযাব থেকে নিরপদে রাখবেন এবং তাদের উপর রহমত বর্ষন করবেন।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:
“অথচ যদি সেই জনপদের মানুষগুলো (আল্লাহ তাআর উপর) ঈমান আনতো এবং (আল্লাহ তাআলাকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের উপর আসমান-যমীনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু (তা না করে) তারা (আমার নবীকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, সুতরাং তাদের কর্মকান্ডের জন্য আমি তাদের ভীষণভাবে পাকড়াও করলাম”। (সূরা আল আ’রাফ : ৯৬)

এবং আল্লাহ আহলে কিতাবধারীদের সম্পর্কে বলেন:
“যদি তারা তাওরাত ও ইনজিল (তথা তার বিধান) প্রতিষ্ঠা করতো, আর যা তাদের উপর তাদের মালিকের কাছ থেকে এখন নাযিল করা হচ্ছে (কুরআন) তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতো, তাহলে তারা অবশ্যই রিযিক পেতো তাদের মাথার উপরের (আসমান) থেকে ও তাদের পায়ের নীচের (যমীন) থেকে”। (সূরা আল মায়িদা : ৬৬)



এবং আল্লাহ আরো বলেন:
“(এ) লোকালয়ের মানুষগুলো কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে (তারা মনে করে নিয়েছে), আমার আযাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে! অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে ধরে নিয়েছে যে, আমার আযাব তাদের উপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না- তখন তারা খেল-তামাশায় মত্ত থাকবে। কিংবা তারা কি আল্লাহ তাআলার কলা-কৌশল থেকেও নির্ভয় হয়ে গেছে, অথচ আল্লাহ তাআলার কলা-কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিত হতে পারে না।” (সূরা আল আ’রাফ :৯৭-৯৯)

আল-আল্লামা ইবনে আল-কাইউম (রহ) বলেন: “মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে উঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়; এইটা মানুষগুলোকে ভীত করে, তারা মহান আল্লাহর নিকট তওবা করে, পাপ কর্ম করা ছেড়ে দেয়, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়”। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলতেন: “মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সতর্ক করছেন”। মদীনায় যখন একবার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তার জনগনকে ভাষণে বললেন: “যদি আরো একবার ভূমিকম্প সংগঠিত হয় তাহলে আমি এখানে তোমাদের সাথে থাকবো না।” 

সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকদের কাছে এরকম আরো অনেক ঘটনার বিবরণ রয়েছে।

যখন কোথাও ভূমিকম্প সংগঠিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন মানুষদের উচিত মহান আল্লাহর নিকট অতি দ্রুত তওবা করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা এবং মহান আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা যেভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য গ্রহণ দেখলে বলতেন: “যদি তুমি এরকম কিছু দেখে থাক, তখন দ্রুততার সাথে মহান আল্লাহকে স্মরণ কর, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।” (আল-বুখারী ২/৩০ এবং মুসলিম ২/৬২৮)

দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করা উচিত, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“দয়া প্রদর্শন কর, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে”। ( ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত, ২/১৬৫)

“যারা দয়া প্রদর্শন করে মহান দয়াশীল আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন। পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর, এবং স্বর্গে যিনি আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন।” ( আবু দাউদ কতৃক বর্ণিত ১৩/২৮৫, আত-তিরমিযী ৬/৪৩)

“যারা দয়া প্রদর্শন করবে না তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে না”। (আল-বুখারী ৫/৭৫, মুসলিম ৪/১৮০৯ কর্তৃক বর্ণিত)

বর্ণিত আছে যে, যখন কোন ভূমিকম্প সংগঠিত হতো, উমর ইবনে আব্দুল আযিয (রহ) তার গভর্ণরদের দান করার কথা লিখে চিঠি লিখতেন।

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা মানুষকে বিপর্যয়(আযাব) থেকে নিরাপদে রাখবে তাহলো, যারা ক্ষমতায় আছে (অর্থাৎ যারা দেশ পরিচালনা করছে) তাদের উচিত দ্রুততার সাথে সমাজে প্রচলিত অন্যায় থামিয়ে দেওয়া, তাদের শরিয়া আইন মেনে চলতে বাধ্য করা এবং সে অনুযায়ী চলা, ভাল কাজের আদেশ দেওয়া এবং খারাপ কাজ নিষেধ করা।

মহান আল্লাহ বলেন:
“মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু। এরা (মানুষদের) ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (জীবনের সব কাজে) আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলে (বিধানের) অনুসরণ করে, এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ; যাদের উপর আল্লাহ তাআলা অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, কুশলী।” (সূরা আত তওবা : ৭১)

“আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহ তাআলার (দ্বীনে) সাহায্য করে, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা শক্তিমান ও পরাক্রমশালী। আমি যদি এ (মুসলমান) -দের (আমার) যমীনে (রাজনৈতিক) প্রতিষ্ঠা দান করি, তাহলে তারা (প্রথমে) নামায প্রতিষ্ঠা করবে, (দ্বিতীয়ত) যাকাত আদায় (এর ব্যবস্থা) করবে, আর (নাগরিকদের) তারা সৎকাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে, তবে সক কাজেরই চূড়ান্ত পরিণতি একান্তভাবে আল্লাহ তাআলারই এখতিয়ারভূক্ত।”(সূরা আল হজ্জ : ৪০-৪১)

“যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে (সংকট থেকে বের হয়ে আসার) একটা পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন রিযিক দান করেন যার (উৎস) সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই; যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট।” (সূরা আত তালাক্ব : ২-৩)

এই বিষয়ে এরকম আরো অনেক আয়াত রয়েছে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন।” (আল-বুখারী ৩/৯৮, মুসলিম ৪/১৯৯৬)

এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি, এই পৃথিবীতে একজন বিশ্বাসীর দুশ্চিন্তা দূর করে দিবে, মহান আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসের দূশ্চিন্তা থেকে নিরাপদে রাখবেন। যে ব্যক্তি, কারো কাজকে সহজ করে দিবে(যে কঠিন কাজে নিয়োজিত), মহান আল্লাহ তার দুনিয়া ও পরকালের কাজকে সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি, একজন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে মহান আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে তার দোষ গোপন রাখবেন। মহান আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত একজনকে সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে।” (মুসলিম ৪/২০৭৪); এই বিষয়ের উপর এরকম আরো অনেক হাদীস রয়েছে।

মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন সকল মুসলিমদের খারাপ অবস্থা থেকে ভাল অবস্থার দিকে উন্নীত করেন এবং তাদেরকে হিদায়াত করেন যেন তারা ইসলামকে ভালভাবে বুঝতে পারে ও দৃঢ়তার সাথে একে আকড়ে ধরে রাখে এবং তিনি যেন তাদের সকল পাপকে ক্ষমা করে দেন। আমরা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন যারা মুসলামানদের ক্ষমতায় আছে(সরকার) তাদের সংগঠিত করেন, এবং তাদের মাধ্যমে সত্যকে সাপোর্ট আর মিথ্যাকে দূরীভূত করে দেন, এবং শরীয়া আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করার জন্য যেন তিনি তাদের সাহায্য করেন, এবং শয়তান যেন তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত, প্ররোচিত ও প্রতারিত করতে না পারে তাথেকে মহান আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন, কারণ মহান আল্লাহই একমাত্র সবকিছূ করার ক্ষমতা রাখেন।

মহান আল্লাহর রহমত এবং শান্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারের এবং সাহাবাদের এবং কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর আপতিত হোক।

মূল লেখকঃ
আবদ্ আল-আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ (রহিমাহুল্লাহ)
(সাবেক গ্রান্ট মুফতি, সউদি আরব) 

মূল লেখাটি পড়ার জন্যএখানে ক্লিক করুন।


।।।। ভুমিকম্প পর্ব ২ দেখতে ক্লিক করুন ।।।

"সকল কিছু তার বিপরীত কিছুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"





ট্যাগঃ নেপাল,ত্রাণ,ফ্রী কুরআন অ্যাপস,ভুমিধস,ভুমিকম্প,ভুমিকম্প বিষয়ক,বৌদ্ধ,ভুমিকম্প থেকে বাচাঁর উপায়,আল্লাহর শাস্তি,নূহ এর কওমকে,সামুদ জাতিকে।।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
যাযাকাল্লাহু খাইরান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরষ্কার দান করুক)

Message

এখান থেকে কপি পেষ্ট করার অনুমতি দেয়া হলো আমার নাম ও এই ব্লগের রেফারেন্স সহ কারণ ইসলাম প্রচারই উদ্দশ্য।

Copyright © King Fahim Published By Blogger Templates20 | Powered By Blogger

Design by Anders Noren | Blogger Theme by NewBloggerThemes.com